
মানবাধিকার কাকে বলে?
মানুষের সুস্থ ও সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার অধিকারকে বলা হয় মানবাধিকার।
সংজ্ঞা ২:
মানুষ তার ব্যক্তিত্ব বিকাশ ও আত্মোপলব্ধির জন্য জাতি, ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে যে ধরণের সমসুযোগ-সুবিধা প্রত্যাশা করতে পারে কিংবা দাবী করতে পারে সেগুলোই মানবাধিকার।
সংজ্ঞা ৩:
মানুষ হিসেবে একজন ব্যক্তি যে সম্মান, অধিকার, শ্রদ্ধা ও নিরাপত্তা প্রাপ্ত হবার অধিকার রাখে, তাদেরকেই Human rights বা মানবাধিকার বলা হয়।
মানবাধিকার, জাতিসংঘ কর্তৃক ঘোষিত ও স্বীকৃত অধিকারসমূহ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকে। ফলে নাগরিক অধিকার এবং মানবাধিকার দুইটি পৃথক বিষয়, বৈশিষ্ট্য-স্বরূপ এর দিক থেকেও এরা আলাদা।রাষ্ট্রীয় পরিমণ্ডলে সীমিত, স্ব রাষ্ট্রের অন্তর্গত নাগরিকদের অধিকার। অপরপক্ষে সমাজ, রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডল অর্থাৎ বৈশ্বিক ও সার্বজনীনভাবে স্বীকৃত মানবাধিকার।
মানবাধিকারের প্রয়োজনীয়তা:
মানুষের জীবনকে ভালো ও সুন্দর করে তুলতে সাহায্য মানবাধিকারগুলো। এজন্য মানুষের জীবনে মানবাধিকারের প্রয়োজন এবং গুরুত্ব অনেক বেশি থাকে।
মানবাধিকারের পাঁচটি প্রয়োজনীয়তা হলো :
- স্বাধীন এবং সুস্থভাবে বেঁচে থাকা এবং জীবনকে সুন্দর করে গড়ে তুলতে সহায়তা প্রদান করে।
- মানুষের ভালো গুণগুলোকে বিকশিত করতে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
- পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের কাছ থেকে মানুষ এসব অধিকার প্রাপ্ত হয়ে থাকে।
- শিক্ষার সুযোগ প্রদানের মাধ্যমে, সমাজে যোগ্যতা ও মর্যাদার সঙ্গে বসবাসের সুযোগ করে দেয়।
- মানুষের মাঝে সম্প্রীতি তৈরির মাহ্যমে, সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সহায়ক।
জাতিসংঘে মৌলিক মানবাধিকার:
১৯৪৮ সালের ১০ ই ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে সর্বপ্রথম মৌলিক মানবাধিকারসমূহকে ঘোষণা এবং স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। এই সনদ অনুসারে জাতি , ধর্ম , বর্ণ ও ভাষা নির্বিশেষে সকল মানুষের স্বাধীনতাকে সমুন্নত করতে হবে। জাতিসংঘের লক্ষ্যকে বাস্তবায়িত করার ক্ষেত্রে মানুষের মৌলিক মানবাধিকারের ঘোষণা এবং স্বীকৃতি প্রদান একটি মহান এবং বলিষ্ঠ পদক্ষেপ হিসেবে মানব ইতিহাসে মাইলফলক হয়ে আছে। এই বিশ্বসংস্থার সকল সদস্য রাষ্ট্র একক কিংবা যৌথ প্রচেষ্টায় মানুষের এই অধিকারগুলোকে বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে বদ্ধপরিকর।
জাতিসংঘের ঘোষণাতে বর্ণিত মৌলিক মানবাধিকারের নীতিসমূহ নিরূপ :
- জন্মগতভাবে সকল মানুষই স্বাধীন, সম অধিকার ও সমমর্যাদা সম্পন্ন এবং সমান সুযোগের দাবিদার। সকল মানুষই বিবেক বিবেচনা বোধ সম্পন্ন। ফলে, সকলেই পরস্পরের সাথে ভ্রাতৃত্বমূলক আচরণ করবে।
- উক্ত ঘোষণায় বর্ণীত সকল প্রকার অধিকার ও স্বাধীনতা; জাতি, ধর্ম, বর্ণ, নারী, পুরুষ, ধনী, গরীব, রাজনৈতিক মতাদর্শ, পদমর্যাদা নির্বিশেষে সকলের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য হবে।
- রাজনৈতিক বা আন্তর্জাতিক মর্যাদা নির্বিশেষে পৃথিবীর সব স্বাধীন, অর্ধস্বাধীন বা অ-স্বায়ত্তশাসিত রাষ্ট্রের নাগরিককে সমদৃষ্টিতে দেখা হবে।
মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার:
মৌলিক অধিকার হল সেইসব অধিকার, যা সার্বভৌম রাষ্ট্রের সংবিধানে সন্নিবেশিত ও বলবৎযোগ্য। রাষ্ট্রীয় পরিমণ্ডলের মাঝেই মৌলিক অধিকার উপভোগযোগ্য।
অপরদিকে মানবাধিকার, আন্তর্জাতিক সংস্থা কর্তৃক ঘোষিত, গৃহীত এবং আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে উপভোগযোগ্য।
মৌলিক অধিকার সমূহ সংবিধানকর্তৃক গৃহীত হওয়ার ফলে এ অধিকারগুলো সুস্পষ্ট এবং অধিকতর দৃঢ়তার সাথে বলবৎযোগ্য হয়ে থাকে।
তবে, মানবাধিকারগুলো সুস্পষ্ট হলেও দৃঢ়তার সাথে বলবৎযোগ্য নয়। কোন নাগরিক তার রাষ্ট্র কর্তৃক নিগৃহীত হলে, সেই রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টি করা সম্ভব হলেও তাকে বিরত করা সবসময় সম্ভব হয় না।
মৌলিক অধিকার এবং মানবাধিকারের মাঝে এসব পার্থক্য থাকলেও এরা একে অপরকে প্রভাবিত করে। মূলত মৌলিক অধিকারের ধারণা থেকেই মানবাধিকারের সৃষ্টি হয়েছে। একইভাবে, মানবাধিকারসমূহ রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে মানুষের মাঝে মৌলিক অধিকারের প্রত্যাশাকে বেগবান করে তোলে। এজন্য মৌলিক অধিকার এবং মানবাধিকার একে অপরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করে।